Friday, March 29, 2013

সবার জন্য গুগল+

ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক থেকে ইন্টারনেট বিশ্বের শীর্ষস্থান এখনো গুগলের দখলে। কিন্তু শীর্ষে থেকেও নিশ্চিন্ত নয় গুগল। কারণ 'ফেইসবুক' দ্বিতীয় স্থানে থেকে নিঃশ্বাস ছাড়ছে গুগলের ঘাড়ে। অবশ্য চুপ করেও নেই গুগল। গত জুনে পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হলেও মঙ্গলবার থেকে সবার জন্য চালু হয়েছে গুগলের সামাজিক যোগাযোগ সাইট 'গুগল প্লাস'।
 সামাজিক যোগাযোগের যে দাওয়াই জুকারবার্গ দিয়েছেন, তা যে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ব্যবহারকারী রুদ্ধশ্বাসে গিলছেন, তা বুঝতে কিন্তু দেরি হয়নি সার্চ জায়ান্ট গুগলের দুই প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজ আর সার্জিও ব্রিনের। তাই সামাজিক যোগাযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় উন্মত্ততা দেখিয়েছেন তাঁরা। ইমেইল সেবার মধ্যে স্বল্পমাত্রায় সামাজিক যোগাযোগ সুবিধা যুক্ত করে ফেইসবুকের কিছু ব্যবহারকারীকে টানতে চেয়েছিলেন, চালু করেছিলেন স্বল্পমাত্রার সামাজিক যোগাযোগ সেবা 'গুগল বাজ', কিন্তু না, ফেইসবুকের টিকিটিও ছুঁতে পারেননি ল্যারিরা। তবে হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র যে তাঁরা নন, তা জানা যায় গুগল প্রতিষ্ঠার ইতিহাস পড়লেই। নতুনরূপে ল্যারিরা নতুন সামাজিক যোগাযোগ সাইট তৈরির উদ্যোগ নেন। আর সে উদ্যোগেরই ফসল গুগলের নিজস্ব প্রথম পূর্ণাঙ্গ সামাজিক যোগাযোগ সাইট 'গুগল প্লাস'।
যা নিয়ে গুগল প্লাস
গুগল প্লাসে সামাজিক যোগাযোগের জন্য বেশ কিছু নতুন ফিচার চালু করেছে, যেগুলো অন্য সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে নেই। গুগল প্লাস ব্যবহারকারীদের একে অন্যের সঙ্গে ভিডিও চ্যাটিং করার জন্য রয়েছে ভিডিও চ্যাটিং ফিচার 'হ্যাংআউট'। একসঙ্গে অনেক ব্যবহারকারী মিলে চ্যাটিং করার জন্য এতে রয়েছে গ্রুপ চ্যাটিং সুবিধা হাডল। আর বিভিন্ন টপিকে বন্ধুদের আলোচনা খুঁজে পাওয়ার জন্য এতে রয়েছে গুগল প্লাস স্পার্ক। হ্যাংআউট ফিচারটি চালুর পর অনলাইনে বেশ আলোচনায় আসে। ভিডিও যোগাযোগ সুবিধা দিতে গুগলের দেখাদেখি ফেইসবুকও ভিডিও চ্যাটিং সুবিধা চালু করেছে।

সামাজিক যোগাযোগ 'ম্যাকানিজম'
প্রতিটি সামাজিক সাইটের নিজস্ব যোগাযোগ 'ম্যাকানিজম' থাকে। যেমন ফেইসবুকে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য প্রথমে তাকে বন্ধু হিসেবে যুক্ত করতে হয়, এরপর অপর পক্ষের অনুমতি পেলেই কেবল একে অন্যের আপডেটগুলো পায়। আর গুগল প্লাসের ম্যাকানিজম একটু ভিন্ন। যেমন আপনি যদি কারো আপডেট পেতে চান তাহলে তাকে প্রথমে আপনার 'সার্কেলে' যুক্ত করে নিতে হবে। এরপর ওই ব্যবহারকারী যদি আপনাকেও তাঁর 'সার্কেলে' যুক্ত করে নেন, তবেই আপনি তাঁর আপডেটগুলো পাবেন। আর তিনি যদি তাঁর সার্কেলে আপনাকে যুক্ত না করেন, তবে আপনি কেবল তাঁর 'পাবলিক' আপডেটগুলোই পাবেন। আবার আপনি কোনো ব্যবহারকারীকে যে সার্কেলে যুক্ত করেছেন, ওই সার্কেলে যখন কোনো কিছু শেয়ার করবেন, তখন ওই ব্যবহারকারী আপনার আপডেটগুলো 'ইনকামিং স্ট্রিম'-এ পেয়ে যাবেন। তথ্য শেয়ার করার জন্য গুগল প্লাসের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, আপনি কার সঙ্গে কোন তথ্য শেয়ার করবেন, সেটি শেয়ার করার সময়ই নির্দিষ্ট করে দিতে পারবেন। ধরুন, আপনার পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানের কোনো আপডেট জানাতে চান কেবল পরিবারের সঙ্গে সংযুক্ত বন্ধুদের, তাহলে সেটি প্রকাশ করার আগে 'শেয়ারিং সার্কেল' থেকে ফ্যামিলি নির্বাচন করতে হবে। ব্যস, কেবল 'ফ্যামিলি' সার্কেলের ব্যবহারকারীরাই আপডেটটি দেখতে পারবেন। ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে তাই যাঁরা একটু বেশিই ভাবেন, তাঁরা অন্তত যাতে নিশ্চিন্তে তথ্য শেয়ার করতে পারেন, সে জন্য এ সুবিধাটি চালু করা হয়েছে।
যেভাবে ব্যবহার করতে হবে
গুগল প্লাস ব্যবহার করার জন্য জিমেইল অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।www.gmail.com থেকে বিনা মূল্যে জিমেইল ঠিকানা তৈরি করা যায়। এরপর গুগল প্লাসে যুক্ত হওয়ার জন্য https://plus.google.com ঠিকানায় গিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। অ্যাকাউন্ট তৈরির পর ব্যবহারকারীর প্রথম কাজ হচ্ছে নিজের প্রোফাইল ভালোভাবে আপডেট করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বেশ কিছু সার্কেল তৈরি করা। এরপর সার্চ অপশনের মাধ্যমে বন্ধুদের খুঁজে নির্দিষ্ট বা একাধিক সার্কেলে যেমন যুক্ত করা যাবে এবং তাদের সঙ্গে যেকোনো আপডেট বা কনটেন্ট শেয়ার করা যাবে।

যেভাবে সার্কেল করতে হবে
সার্কেলকে বিভাগ বা ফেইসবুকের তালিকার মতো বলা যায়। আপনি আপনার বন্ধুদের মধ্য থেকে বিভিন্ন সার্কেল তৈরি করে নেবেন। যেমন পরিবারের সদস্যদের জন্য 'ফ্যামিলি' সার্কেল। অফিসের সহকর্মীদের জন্য 'কলিগ' সার্কেল। সার্কেল তৈরি করতে Circles-এ ক্লিক করে দেখা যাবে নিচে কিছু সার্কেল রয়েছে। এখানে বাঁয়ে Drop here to create a new circle-এ ক্লিক করে সার্কেল তৈরি করা যাবে। এখন বন্ধুদের সার্কেলের ওপর টেনে আনলেই হবে। এ ছাড়া কোনো বন্ধু বা প্রোফাইল সার্কেলে যুক্ত করা না থাকলে Add to circles-এ ক্লিক করে পছন্দের সার্কেলে যুক্ত করা যাবে।
আপডেট প্রকাশ : ফেইসবুকে আমরা যেটাকে 'স্ট্যাটাস' হিসেবে জানি, গুগল প্লাসে সেটিই হচ্ছে আপডেট। কোনো আপডেট লিখে তা নির্দিষ্ট সার্কেলের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করা যাবে। কোন আপডেটটি কার সঙ্গে শেয়ার করতে চান তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া যাবে প্রকাশের আগেই। এটা সবার জন্য (পাবলিক) প্রকাশ করতে চান, নাকি নির্দিষ্ট সার্কেলের জন্য, তা-ও ঠিক করে দেওয়া যাবে। এ জন্য Share বাটনের ওপর Add more people-এ ক্লিক করতে হবে।
যেভাবে ভিডিও চ্যাটিং করবেন
একে অন্যের সঙ্গে ভিডিও চ্যাটিং করা যায় গুগল প্লাসের হ্যাংআউট ফিচারের মাধ্যমে। এটি ব্যবহার করার জন্য গুগল প্লাসের হোমপেইজ থেকে ডান পাশের Start a Hangout-এ ক্লিক করলে নতুন একটি উইন্ডোতে হ্যাংআউটস চালু হবে। হ্যাংআউট ব্যবহার করার জন্য একটি প্লাগইনস ইনস্টল করতে হয় কম্পিউটারে। প্রথমবারই কেবল প্লাগইনসটি ইনস্টলের প্রয়োজন পড়ে। ইনস্টলের লিংকটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসবে ব্রাউজারে। ভিডিও চ্যাটিং করার সময় চাইলে এটি সেভ করেও রাখতে পারেন পরবর্তী সময়ে দেখার জন্য। তবে ডিফল্ট সুবিধা নয়, থার্ডপার্টি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে এটি করতে হবে। বিস্তারিত টিউটোরিয়াল মিলবে http://www.googleplusjournal.com/2011/08/how-to-record-google-plus-hangout-video/ সাইটে।

জিমেইলে আসবে নোটিফিকেশন
গুগল প্লাসে কোনো হালনাগাদ (আপডেট) এলে তা জিমেইলের ওপর ডানে Notifications-এ সংখ্যা দেখা যাবে। এখানে ক্লিক করে নোটিফিকেশনগুলো পাওয়া যাবে এবং নোটিফিকেশনটিতে ক্লিক করলে গুগল প্লাস পেজ খুলবে। এ ছাড়া ওপরে বাঁ পাশে গুগল প্লাসের একটি ট্যাবও থাকবে। এখানে ক্লিক করে গুগল প্লাসে যাওয়া যাবে।

আরো আছে যা
উপরোক্ত ফিচারগুলো ছাড়াও গুগল পিকাসাতে থাকা 'পাবলিক' ছবির অ্যালবামগুলো গুগল প্লাসের ফটো ট্যাবে দেখা যাবে। আর গুগল প্লাস থেকে কোনো ছবি যুক্ত করলে তা গুগল পিকাসার স্ক্র্যাপবুক ফটোস অ্যালবামে যুক্ত হবে। মোবাইল ফোন থেকে গুগল প্লাস ব্যবহারের জন্য এর আলাদা একটি সংস্করণ রয়েছে। m.google.com/plus ঠিকানার সাইট থেকে মোবাইলের মাধ্যমে গুগল প্লাস ব্যবহার করা যাবে। অন্য বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাটিং করার জন্য গুগল প্লাস হোমপেইজের বাঁ পাশের Chat-এ ক্লিক করতে হবে।



গুগল প্লাস সেটিংস
গুগল প্লাস সেটিংস থেকে দরকারি কিছু পরিবর্তন করা যাবে, এ জন্য ওপরের ডানে Options বাটনে ক্লিক করে google+Settings-এ ক্লিক করে বিভিন্ন সেটিং পরিবর্তন করা যাবে। যেমন_মেইল হিসেবে আসা নোটিফিকেশন বন্ধ করা, প্রাইভেসি পরিবর্তন করা, ভাষা সেট করা, ডাটা ডাউনলোড করা, অন্য অ্যাকাউন্ট যুক্ত করা এবং গুগল প্লাস অ্যাকাউন্ট ডিলিট করা ইত্যাদি।

পারবে কি গুগল প্লাস?
অধিকাংশের মতেই, ফেইসবুককে পেছনে ফেলা হয়তো গুগল প্লাসের পক্ষে সম্ভব হবে না; আবার অনেকেই বলছেন, গুগল পারবেই, আর গুগল প্লাসই হবে শীর্ষ সামাজিক যোগাযোগের সাইট। তবে আসলে কার ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে, সেটি জানার জন্য পাঠকদের হয়তো অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েক বছর।
 

No comments:

Post a Comment