Tuesday, March 26, 2013

ওয়েবে নিজের ঘর ডোমেইন এবং হোস্টিং





নাম নির্বাচন: ডোমেইন ও হোস্টিং সেবা প্রতিষ্ঠান ই-সফটের প্রধান নির্বাহী আরিফুল ইসলাম অপু জানান, সাধারণত প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে মিল রেখে ডোমেইন কেনা হয়। যেমন_কালের কণ্ঠের ওয়েবসাইটের ঠিকানা : www.kalerkantho.com। এ নামই একটি ওয়েবসাইটের ডোমেইন নাম। ডোমেইন নামের মধ্যেও বেশ কিছু ভাগ রয়েছে। যেমন_বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ডোমেইন নাম সাধারণত .com দিয়ে শেষ হয় (যেমন www.grameenphone.com)। আবার সংস্থাগুলোর ওয়েবসাইট সাধারণত ডট ওআরজি (যেমন:www.undp.org) দিয়ে শেষ হয়। তবে ইন্টারনেটে .পড়স ডোমেইনই জনপ্রিয়। ডোমেইন কেনার সময় ব্যবহারকারীর পছন্দই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ডোমেইন নাম প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা উচিত।

ওয়েব হোস্টিং
:
হোস্টিং মূলত অনলাইনে তথ্য আপলোড করার সার্ভার। এ বিষয়ে ওয়েব ডেভেলপার তুহিন মাহমুদ জানান, ওয়েবসাইটের ডোমেইন নামকে যদি একটি অফিসের ঠিকানা হিসেবে ধরা হয়, তবে হোস্টিং হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের অফিস ভবন, রুম, আসবাবপত্র ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের মালিক যত মেগাবাইট ওয়েব হোস্টিং কিনবেন তিনি ততটুক তথ্যই আপলোড করতে পারবেন। অনেকটাই এ রকম_একজন ব্যবসায়ী যত বড় গোডাউন ভাড়া নিচ্ছেন, ততটুকুই মাল রাখার সুযোগ পাচ্ছেন।
ওয়েবসাইট ডিজাইন
ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইট ডেভেলপার ইউনুস হোসেন জানান, যাঁরা কম বাজেটের মধ্যে ডায়নামিক ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান তাঁরা ওয়ার্ডপ্রেস ও জুমলাসহ 'ওপেনসোর্স কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম' বা সিএমএস ব্যবহার করতে পারেন। আর ওয়েবসাইট ডিজাইনের আগে অবশ্যই ডেভেলপারকে আপনার চাহিদাগুলো ভালোভাবে বলতে হবে। তাহলে ডেভেলপারই নিজ থেকে পছন্দ করে নিতে পারবে উপযুক্ত ওয়েবসাইট প্লাটফর্মটি।



সেবা দেয় যারা:
ইন্টারনেটে ডোমেইন নাম নিয়ন্ত্রণ করে ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাসাইন নেমস অ্যান্ড নাম্বারস বা আইসিএএনএন। এ প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন সাপেক্ষে ব্যবহারকারীদের চাহিদা অনুযায়ী এদের বিভিন্ন ধরনের হোস্টিং বিক্রি করে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এদের কাছ থেকে ডোমেইন কেনা যায়। তবে সরাসরি কেনার চেয়ে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকেই ডোমেইন কেনার পরামর্শ দেন অধিকাংশ ওয়েব ডেভেলপার। তাদের মতে, কোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধান করার সুযোগ থাকে না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকেই বরং ভালো সেবা পাওয়া যায়। বাংলাদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের 'ডোমেইন রিসেলার' হিসেবে ডোমেইন নাম বিক্রি করে থাকে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই এসব প্রতিষ্ঠানের হোস্টিং সেবাও রিসেলার হিসেবে বিক্রি করে। অনেক প্রতিষ্ঠানের আবার যুক্তরাজ্য বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে নিজস্ব সার্ভার রয়েছে। তবে যে প্রতিষ্ঠান থেকেই কিনুন না কেন, ইন্টারনেটে ওই প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসেবাসংক্রান্ত তথ্য ও রিভিউ দেখে নেবেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন হোস্টিং ফোরামের পাশাপাশি এখন বাংলা ভাষায়ও হোস্টিং-সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা করার ফোরাম রয়েছে। সেখানেও আলোচনা করে পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে হোস্টিং কিনতে পারেন।

রয়েছে বাংলাদেশি ডোমেইন:
বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের জন্যও আলাদা টপ লেভেল ডোমেইন (.বিডি) রয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নামের শেষে ডট কম ডট বিডি (.com.bd) যুক্ত হবে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) এ ডোমেইন নিয়ন্ত্রণ করে। http://www.btcl.gov.bd/home/main/services/ dotbd_whois_FAQ.php সাইট থেকে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। তবে .বিডি ডোমেইনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। বিটিসিএলের সার্ভার সমস্যার কারণে গত বছর গুগল, ইয়াহু ও এইচএসবিসি ব্যাংকসহ প্রায় অর্ধশত প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের 'ডোমেইন নেম সিস্টেম' বা ডিএনএস পরিবর্তন করে দিয়েছিল হ্যাকাররা।

খরচাপাতি:
অনলাইন থেকে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডোমেইন কিনলে খরচ ১০ থেকে ১৫ ডলার পর্যন্ত পড়ে। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো ৬০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যেই ডোমেইন বিক্রি করে। হোস্টিংয়ে মধ্যম ও ছোট প্রতিষ্ঠানের খরচ পড়ে বছরে ২০০ থেকে চার হাজার টাকা। বাংলাদেশি টপ লেভেল ডোমেইন কিনতে দুই বছরের জন্য খরচ এক হাজার ৫০০ টাকা। আর সাধারণ ওয়েবসাইট ডিজাইনের ক্ষেত্রে খরচ পড়ে পাঁচ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ছোট প্রতিষ্ঠান বা যেসব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট নিয়মিত আপডেট করার প্রয়োজন পড়ে না তারা স্ট্যাটিক ডিজাইন করিয়ে নিতে পারেন। তবে যেসব ওয়েবসাইট নিয়মিত আপডেট করার প্রয়োজন তাদের অবশ্যই ডায়নামিক ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে।
  হোস্টিং কেনার আগে বিবেচ্য:
সার্ভার : যেসব ওয়েবসাইটে একই সময়ে কয়েক হাজার ব্যবহারকারী থাকে, সেগুলোর ক্ষেত্রে ডেডিকেটেড সার্ভার কিনতে হয়। এ ধরনের একটি সার্ভারের পেছনে প্রতি মাসে দেড় শ থেকে ছয় শ মার্কিন ডলার পর্যন্ত খরচ হয়। যেসব ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারী কম, তাদের ক্ষেত্রে 'শেয়ারড সার্ভার' হলেই চলে। এ ক্ষেত্রে খরচ অনেক কম। বছরে মাত্র ২০০ টাকা খরচ করেও শেয়ারড সার্ভার ব্যবহার করা যায়।
ডিস্ক স্পেস :  ওয়েব ডেভেলপার তাওহিদুল ইসলাম রাজিব জানান, ব্যক্তিগত আর ছোট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ২০০ মেগাবাইট হোস্টিংই যথেষ্ট। যেসব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে একটু বেশি ছবি আপলোড করতে হবে সেগুলোর ক্ষেত্রে হোস্টিং ২৫০ থেকে ৫০০ মেগাবাইট জায়গা আদর্শ। অনেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওয়েব হোস্টিং নিচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, প্রয়োজনের বেশি ওয়েব হোস্টিং নিলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত কিছু টাকাই শুধু নষ্ট হয়।

প্রতিষ্ঠান দেখে হোস্টিং কেনা : 
ডোমেইন ও হোস্টিং স্পেস কেনার আগে অবশ্য সে প্রতিষ্ঠানের সেবার মান যাচাই করে নেওয়া উচিত। হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার পর ওই প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিক্রয়োত্তর সেবা দেবে কি না, সেটিও যাচাই করে নিতে হবে। বিক্রয়োত্তর সেবার জন্য ব্যবহারকারীকে অতিরিক্ত কোনো টাকা পরিশোধ করতে হবে কি না বা হলেও তার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে নিতে হবে।

কন্ট্রোল প্যানেল :  
ওয়েবসাইটে কোনো পরিবর্তন আনা বা কোনো সেবা পরিবর্তন করার জন্য প্রয়োজন ওয়েবসাইট কন্ট্রোল প্যানেল। আবার ডোমেইনটিকে অন্য প্রতিষ্ঠানের সাইটে হোস্ট করার জন্যও ডোমেইন কন্ট্রোল প্যানেলের প্রয়োজন। এ জন্য যে প্রতিষ্ঠান থেকে সেবাটি নেবেন সেখান থেকে অবশ্যই ডোমেইন ও হোস্টিংয়ের পূর্ণ কন্ট্রোল প্যানেল (ইউজার নেম-পাসওয়ার্ড) নিজের কাছে রাখবেন। অনেক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের ধরে রাখার জন্য কন্ট্রোল প্যানেলে প্রবেশাধিকার দেয় না। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান এড়িয়ে চলা উচিত।

No comments:

Post a Comment